মোবাইল ডেটা এবং অন্যান্য প্যাকেজে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই পরিবর্তনের ফলে অপারেটরদের অফারের সংখ্যা কমে যাবে এবং গ্রাহকরা তাদের বর্তমান প্যাকেজের অব্যবহৃত ডেটা পরবর্তী প্যাকেজের সঙ্গে পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) একটি নতুন নির্দেশিকা অনুসারে, অপারেটরদের বর্তমান কয়েকশ প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে ৯৫টিতে আনতে হবে।
অধিক প্যাকেজ এবং জটিল শর্তের জাল থেকে গ্রাহকদের স্বস্তি দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অধিক প্যাকেজ থেকে নিজের সুবিধাজনক প্যাকেজটি খুঁজে নেওয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মার্চ থেকে নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বিটিআরসি ইতোমধ্যে অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে। বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, ‘বাজারে অসংখ্য প্যাকেজ রয়েছে যেগুলো বিভ্রান্তি তৈরি করছে। গ্রাহকরা মন্ত্রণালয়, বিটিআরসির কল সেন্টারে এবং গণশুনানির সময় এ বিষয়ে অভিযোগ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ডেটা প্যাকেজগুলোকে সহজ করার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে গ্রাহকরা সহজেই তাদের পছন্দসই প্যাকেজ নির্বাচন করতে পারেন।’নতুন নির্দেশনা দেওয়ার আগে, বিটিআরসি অপারেটরগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে এবং একটি উন্নত ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য বাজার বিশ্লেষণ করে।
প্যাকেজ মাত্র ৩ বিভাগে
নতুন নির্দেশনা অনুসারে, একটি অপারেটর ৩টি বিভাগে ৯৫টি প্যাকেজ দিতে পারবে। এগুলো হলো, নিয়মিত প্যাকেজ, গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ এবং গবেষণা ও উন্নয়ন প্যাকেজ।
সব ধরনের গ্রাহকের জন্য নিয়মিত প্যাকেজের সংখ্যা হতে পারবে সর্বোচ্চ ৫০টি। গ্রাহক কেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৩৫টি। বাকি ১০টি গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগে আসবে, যাতে অপারেটররা প্যাকেজ এবং পরিবর্তিত গ্রাহক প্রবণতার কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করতে পারে।
প্রতিটি প্যাকেজে ৩, ৭, ১৫ এবং ৩০ দিনের সময়কাল থাকবে।
গ্রামীণফোনের এক্সটারনাল কমিউনিকেশনের প্রধান মো. হাসান বলেন, ‘বিটিআরসির সর্বশেষ নির্দেশনা অনুসরণ করে আমরা প্যাকেজের সংখ্যা কমিয়ে আনা শুরু করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গ্রাহকের চাহিদা বুঝে তাদের সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিতে প্যাকেজ সরলীকরণ বৈচিত্র্যে বিশ্বাস করি।’
বাংলালিংকের কর্পোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটির প্রধান অঙ্কিত সুরেকা বলেন, ‘একটি কমপ্লায়েন্ট কোম্পানি হওয়ায় আমরা বিটিআরসির নিয়ম মেনে চলি এবং সেই অনুযায়ী নতুন নির্দেশনাও অনুসরণ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে, আমরা বিশ্বাস করি, পণ্যের সংখ্যা সীমিত করা উচিত না। কারণ, মানুষ এখন কাস্টমাইজড পণ্য চায়। তাই, গ্রাহকদের নিজেদের পছন্দের জিনিসটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।’
অব্যবহৃত ডেটা যোগ হবে নতুন প্যাকেজে
বিটিআরসির নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সময়কাল নির্বিশেষে যেকোনো ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ গ্রাহক ক্রয় করলে অব্যবহৃত ডেটা পরের প্যাকেজে যোগ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন গ্রাহক ৩ দিন মেয়াদে ৭ গিগাবাইট (জিবি) ডেটা ও ১০০ মিনিট টকটাইমের প্যাকেজ কিনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা শেষ করতে না পারেন, তাহলে অব্যবহৃত ডেটা বা টকটাইম মেয়াদ শেষে আর ব্যবহার করতে পারেন না।
কিন্তু ১ মার্চ থেকে গ্রাহকরা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে অব্যবহৃত ডেটা এবং টকটাইম নতুন প্যাকেজে স্থানান্তরের সুবিধা পাবেন। ফলে অব্যবহৃত ডেটা ও টকটাইম নতুন ডেটা ও টকটাইমের সঙ্গে যোগ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, অন্য তিন ধরনের মেয়াদে নতুন প্যাকেজ কিনলেও অব্যবহৃত ডেটা স্থানান্তর করা যাবে।
কলম্বোভিত্তিক লিরনেএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, নতুন প্যাকেজ সংখ্যা এখনও বেশি এবং এটি গ্রাহক স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির দাম এবং প্যাকেজ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। কারণ এটা অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক বাজার। এখানে দাম নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত একেবারেই বিপরীতমুখী।’
তিনি আরও বলেন, সব প্যাকেজের মেয়াদ সংযোগের বৈধতার মেয়াদের সমানুপাতিক হওয়া উচিত। অর্থাৎ ৯০ দিন হওয়া উচিত। অপারেটরগুলো তাদের প্যাকেজে বোনাস অফার করতে পারবে। তবে, পণ্যের দাম তাদের খরচের চেয়ে কম হতে পারবে না। যদিও তারা সর্বনিম্ন দামে দিতে পারবে। মোবাইল অপারেটরদের তাদের নিয়মিত প্যাকেজের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
এ ছাড়াও প্রতি মাসে গ্রাহকদের খরচ সম্পর্কে অবহিত করতে বাংলায় এসএমএস পাঠাতে এবং গ্রাহকের অনুরোধ সাপেক্ষে ব্যবহারের তথ্য ইমেল করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অপারেটরদের। গ্রাহকদের এক দিনে একটি প্যাকেজ সম্পর্কিত ৩টির বেশি প্রচারমূলক এসএমএস পাঠানো যাবে না।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের মহাসচিব এসএম ফরহাদ বলেছেন, অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শের পর নিয়ন্ত্রক প্যাকেজের সংখ্যা নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রশংসা করি।’ সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার